জীবনপঞ্জিঃ ০৪


টাইটেলঃ স্মৃতির জন্ম
তারিখঃ ২০ জানুয়ারী ২০১৭ [ মুল লেখার সময়ঃ ১৭ মে ১৯৯৪ ]

আমার যতটুকু মনে পড়ে ছোট বেলায় আমি হয়তো পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হতে চেয়েছি কিন্তু কখনো বড় হয়ে ডাক্তার হবো – এরকম কথা বলিনি । ডাক্তারির প্রতি কেন এত অনীহা ছিল বুঝতে পারছিনা । বিজ্ঞান মজার সাবজেক্ট – কিন্তু মনোবিজ্ঞান, ও আমি ছুঁয়েও দেখিনি ।

এসব কারণেই হয়তোবা মানুষের স্মৃতির জন্ম কখন থেকে শুরু হয় জানিনে । কখন থেকে মানুষ তার অতীতকে মস্তিষ্কের Store Cell – এ জমা রাখতে পারে তার সঠিক সময় আমার অজানা। আমার প্রথম স্মৃতি কোনটি, …?

একটা অস্পষ্ট ক্ষণিকের ছবি আমার চোখে (মনে) ভাসে । স্থান, কাল কিছু মনে নেই । ছবিতে দেখি একটি ক্ষুদ্র বালক টলটলায়মান পায়ে হাঁটছে। ঠিকভাবে হাঁটতে শেখেনি । ঘরের দরজা দিয়ে বের হয়ে করিডোর ধরে হাঁটছে । অনেকটা পথ হাঁটার পর সে ঘুরে নিজের বাসায় যাবার জন্য এ দরজা ও দরজায় উঁকি মারছে । কিন্তু হায়, কোনটাই তার পরিচিত ঘরটি নয় । সবকিছুই অপরিচিত লাগছে । এ কোথায় এসে পড়লো বালকটি । ভয়ে বিবর্ণ পথহারা ক্ষুদ্র বালক চীৎকার করে কাঁদতে লাগলো ।

ঘর হারানো, পথ হারানো বালকটিকে নিশ্চয় সেদিন কেউ উদ্ধার করেছিল – না হলে সেই আমি বাবা মার কাছে থাকলুম, বড় হলুম কিভাবে । যাইহোক ও টুকুই আমার প্রথম স্মৃতি । তাহলে দেখা যাচ্ছে তখন আমার বয়স ছিল দু থেকে তিন বৎসরের মাঝামঝি । সেদিনের সেই ক্ষুদ্র বালক, সত্যিই আজকের এই ‘ আমাকে ‘ অবাক করলে ।

একটি তত্ত্ব কথা মনে হওয়ায় না লিখে পারছিনে । আমরা বলে থাকি, অমুকের জন্ম এত সালের এত তারিখে । যে শিশুটির জন্ম দেখেছে তার কাছে সেটাই সত্য হতে পারে । কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে, অতীত স্মৃতির গহবরে ডুব দিয়ে যেখানে আমাদের চিন্তা ঠেকে যায়, যে দৃশ্যে আমাদের মন চক্ষু, স্মৃতি চক্ষু আটকে যায় ; যার পিছনে সব অন্ধকার ঠেকে সেই খান থেকে আমাদের কাছে সত্যিকার আমাদের জন্ম হয় । তার আগ পর্যন্ত নিতান্তই আমরা নিম্নস্তরের অন্যান্য জীবের মত একটি জীব মাত্র – যার কোন চিন্তা চেতনা, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নেই ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *