বই পড়ার গপপো

প্রথম সাহিত্যের কোন বই পড়িয়া ছিলাম আজ এতকাল পরে আর স্মরণ করিবার উপায় নাই ।

কৈশোরে সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দার কথা খুব মনে পরে । গোয়েন্দা নেতা কিশোর হইবার উদ্যম অনেক দিন তাড়াইয়াছে । রবিনহুড অনুবাদ পড়িয়া একদিকে রবিনহুডের বীরত্বে মুগ্ধ হইয়াছি আবার একদম বইয়ের শেষ দৃশ্যে মৃতপ্রায় রবিনহুডের দুর্বল হস্তে তীর ছুঁড়িবার দৃশ্যটি সেই সময়ের কিশোরের চোখে পানি আনিয়াছে । আমার কৈশোরের অনেক অনেক দিনের হিরো ছিলেন রবিনহুড । তীর লইয়া আরেকটি বই পড়িয়াছিলাম, সম্ভবত নাম ছিল ‘কালো তীর’ । ওয়েস্টারন আউটলয়ারদের কথা ভুলি কিভাবে, ইয়া ঠিসুয়া, পিস্তল, বুলেট আর ফু মেরে পিস্তলের ধূয়া উড়িয়ে ফেলা । অল কোয়াইট অন দ্যা ওয়েস্টআরন ফ্রন্ট আরেকটি অসাধারণ বই ।

‘উভচর’ নামে একটি বই পড়িয়া পুলকিত হইয়াছি, হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালের বই পড়িয়া আনন্দিত হইয়াছি ।

প্রথম যৌবনে সমরেশ মজুমদারের উত্তরাধিকার, কারপুরুষ, কালবেলা, গর্ভধারিণী পড়িয়া নিজেকে মনে মনে অর্ক ভাবিয়াছি । সেই সময় তসলিমা নাসরিনের ‘ লজ্জা ‘ও কিছু কিছু ব্যাপারে আমার দৃষ্টি ভঙ্গী বদলাইয়া দিয়েছিল বইকি । সুনীলের ‘সেই সময়’ পড়িয়া অবাক হইয়াছি এই ভাবিয়া যে ইতিহাস কিভাবে এতো মজা করিয়া গল্পচ্ছলে বলা যাইতে পারে ।

নিহারঞ্জন গুপ্তের রহস্য উপন্যাস, কুয়াশা সিরিজ, ‘ বেনহুর ‘ , কীসব রহস্য আর থ্রিলার, আহা ! শারলক হোমসের বাস্কারভিলের হাউন্ড এখনও মাঝে মাঝে তাড়িয়ে বেড়ায় । সত্যজিতের ফেলুদা, সুনীলের কাকাবাবু বা কম কিসে । সুকুমার রায়ের গল্প আর ছড়া, না পড়লে তো সবি মিছে ।।

খুব ছোট্ট বেলায় ‘ ভণ্ডুল ‘ নামে বোধ হয় একটি বই পড়িয়াছিলাম । মিথ্যা বলিলে যার নাক লম্বা হইয়া যাইত । ছোট বেলায় মায়ের সাথে মিথ্যা বলিয়া অনেক মার হতে মুক্তি পাইয়াছি যেমনি, আবার রাতের বেলায় নাক লম্বা হইবার ভয়ে ভীত হইয়াছি তেমনি । ” ঠাকুমার ঝুলির ” দৈত্য, রাক্ষস, ভুত, পেত্নী, পরী, রাজপুত্র, রাজকুমারী রাত্রি বেলায় কম জ্বালায়নি । আর সেই সময় টয়লেট গুলোও কেন জানি ছিল উঠোনের ওই পাড়ে, অন্ধকারে ।

রাশিয়ার উপন্যাস গুলির কথাও অনেক মনে পড়ে । নিকলাই অস্ত্রভস্কির ‘ ইস্পাত ‘ এর কথাই কেবল মনে পড়িতেছে বেশি । গাইবান্ধা থানা পাড়ার ছোট্ট একটি লাইব্রেরীর পুরনো বইয়ের মাদকতার গন্ধ এখনো নাকে লাগে । সেই সময় বোধহয় একুশে ফেব্রূয়ারী লইয়া ‘ একাংকিকা ‘ লিখিবার বৃথা চেষ্টা করিয়াছিলাম ।

ইসলামিক বইগুলোর কথাও কি বলা উচিত নহে । সেই আলফে সানীর মারেফাতের কঠিন বই বুঝিবার বৃথা চেষ্টা করা । তবে ইমাম গাজ্জালির বই কিমায়ায়ে সাদাত, মুকাশাফাতুল কুলুব, এহ ইয়াউলুমদ্দিন ভীষণ প্রভাব ফেলিয়াছিল সেই যৌবনের গোড়ার দিকে ।

1 Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *