একটি চড় এবং অতঃপর…


তারিখঃ ১8 ডিসেম্বর ২০১৬ ছোট বেলায় আমিও দুষ্টু বালকদের দলেই ছিলাম । ক্লাসে স্যার না থাকলে আমার কাজ ছিল ডায়াছের সামনে গিয়ে এমন কিছু বলা বা করা যাতে সমস্ত ক্লাস হেসে উঠতো, আনন্দিত হতো । ক্লাসে স্যার না থাকলেই বন্ধুরা বলত, রেজা তুই সামনে যা। ক্লাস সেভেন, আমাদের রনি (Rony Ahmed) তখন ক্লাস ক্যাপ্টেন ।…

তারিখঃ ১8 ডিসেম্বর ২০১৬

ছোট বেলায় আমিও দুষ্টু বালকদের দলেই ছিলাম । ক্লাসে স্যার না থাকলে আমার কাজ ছিল ডায়াছের সামনে গিয়ে এমন কিছু বলা বা করা যাতে সমস্ত ক্লাস হেসে উঠতো, আনন্দিত হতো । ক্লাসে স্যার না থাকলেই বন্ধুরা বলত, রেজা তুই সামনে যা।

ক্লাস সেভেন, আমাদের রনি (Rony Ahmed) তখন ক্লাস ক্যাপ্টেন । ক্যাপ্টেনের পাশের ডেস্কটাই ছিল আমার । সেদিন ক্লাসে স্যার দেরিতে আসায় যথারীতি প্রচণ্ড শব্দ, হৈ চৈ, চিল্লা পাল্লা চলছিল । সুকুমার রায়ের ভাষায় যাকে বলে ‘ চীৎকারে ক্লাস মাথায় উঠিয়া পড়িল ‘ । সাধারনত এসবের মধ্যমনি আমিই থাকতাম । কিন্তু সেদিন আমি কোন একটি বইয়ের মধ্যে ডুবে ছিলাম । আশে পাশে কী চলছিল তার কোন খেয়াল ছিল না ।

” যাহার দুই হাত সমান চলে ” – বাংলা ব্যাকরণে তাকে ” সব্যসাচি ” বলে । আমাদের ফর্ম মাস্টার স্যার ছিলেন সত্যিকারের সব্যসাচি । উনি যখন কাউকে চড় মারতেন তখন ওনার দু হাত সমানে চলত । বাম হাত দিয়ে ডান গালে ও কানে এবং ডান হাত দিয়ে টার্গেটের বাম গাল ও কানে সমানে চড় চলতে থাকত । একটানা দু হাতে ২০/ ৩০/ ৪০ কিংবা ততোধিক চড় দিবার পরে উনি থামতেন । ততক্ষণে টার্গেটের নাকে ও চোখে জল অবশ্যম্ভাবী । কান আর গালের রং পালটাবার কথা না হয় নাই বললাম ।

হঠাৎ কোথা হতে ফর্ম মাস্টার স্যার এসে দু হাতে রনিকে ( ক্যাপ্টেন ) চড় মারতে লাগলেন । তাড়াতাড়ি বলো – “ কে কে দুষ্টুমি করছিল ? “ [ Who are the DCs (disturbing cadets) ] বেচারা রনি চড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রথমেই ‘ রেজা ’ র দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করল । আর যায় কোথায় ; সব্যসাচির আকস্মিক আক্রমনে এই ছোট্ট আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম । চোখে পানি এসে গেলো । ব্যথায় যতটুকু না কাঁদলাম তার চেয়ে বেশি মন খারাপ হল এই অভিমানে যে – আমি সবাইকে হাসাই, আনন্দ দেই অথচ আমাকেই সবাই বিপদে ফেললো । অন্যদিকে আবার আজকে আমি দুষ্টুমিই করি নাই ।

আহা ! ছোট বেলার অভিমান, বড় অভিমান, বড় অবুঝ , বড় বাধ ভাঙ্গা ।
ঠিক করলাম এখন থেকে দুষ্টুমি কমিয়ে একটু পড়াশোনায় মনযোগী হবো । বার্ষিক পরীক্ষায় তৃতীয় হয়ে মনে হলে আমিও তো পারি । এরপরের পড়াশোনার গল্পটা গৌরবের ছিল বৈকি ।

[ যে ঘটনাটা বলে গল্পটা শেষ করবো, সেটা হল যতদিন স্যার ছিলেন এরপর থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় স্যার আমাকে ওনার সাবজেক্টে Highest Marks দিতেন । পরীক্ষায় ভালো করলেও, খারাপ করলেও। প্রকৃতির (Nature) প্রকৃতি (Mystery) বোঝা সত্যি অসাধ্য । ]

১৪.১২.২০১৬
কটকি পাড়া , রংপুর


kholakash Avatar


More Articles & Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *